রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪৫ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেক্স: মায়ানমার দীর্ঘদিন ধরে দেশটির রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে। তাদের নাগরিকত্ব, মৌলিক অধিকার, বিয়ে করার অধিকার, ধর্মচর্চা এবং শিক্ষা গ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ২০১২ সালের সহিংসতার পর বৌদ্ধ চরমপন্থীরা কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গাদের তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে। তাদের অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাচারকারীদের নৌকায় অন্যত্র পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এখনো কয়েক লক্ষাধিক মানুষ দারিদ্র্যপীড়িত অবস্থায় বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে বসবাস করছে। এখন আবার দেশটির সামরিক বাহিনী কর্তৃক বিদ্রোহ দমনের নামে চালানো অভিযানে হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের তাদের গ্রাম ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
রয়টার্সের তথ্যানুযায়ী, সহিংসতা ও দমনপীড়ন থেকে নিজেদের বাঁচাতে একটু আশ্রয়ের খোঁজে চলতি সপ্তাহজুড়ে শত শত রোহিঙ্গা মুসলমান মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে। জাতিসংঘের সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের’ একজন কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থাকে জানান, তিনি ৫০০ জনেরও বেশি মানুষকে সীমান্তের কাছাকাছি পাহাড়ে তাদের একটি ক্যাম্পে প্রবেশ করতে দেখেছেন।
এদিকে, রয়টার্সের আরেকটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, চীনের সঙ্গে মায়ানমারের সীমান্তে বিদ্রোহীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। মায়ানমারের রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ৯ অক্টোবর সৈন্য ও পুলিশ অফিসারদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সশস্ত্র আক্রমণকারীদের হামলায় রাখাইন রাজ্যে নয়জন পুলিশ অফিসার নিহত বলে দেশটির কর্তৃপক্ষের দাবি। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় দেশটির সামরিক বাহিনীর বিদ্রোহ দমন অভিযান শুরু করে। যদিও এটা স্পষ্ট নয় প্রকৃত আক্রমণকারী আসলে কারা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীদের ক্যাডার বাহিনী এই হামলা চালিয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রকাশিত উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায়, ২২ অক্টোবর এবং ১০ নভেম্বর মধ্যে উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের কয়েকটি গ্রামে ১২শ’রও বেশি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। সৈন্যরা কর্তৃক লুটপাট, নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা এবং নারী ধর্ষণের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও দেশটির সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রাখাইন রাজ্যে ৯ অক্টোবরের হামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান উ অং উইন মন্তব্য করেন, তাদের সৈন্যরা রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করবে না কারণ তারা ‘খুবই নোংরা’।
৯ অক্টোবরের ওই আক্রমণ দেশটির আগের সরকারের লোকদের দ্বারাও সংগঠিত হতে পারে। কেননা তারা এর আগে ঘোষণা দিয়েছিল যে, তারা ওই এলাকায় ২,৫০০’রও বেশি ঘরবাড়ি, ৬০০ দোকান, এক ডজন মসজিদ ও ৩০টি স্কুলসহ অবৈধ স্থাপনা ধ্বংস করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এক বছর আগে একটি ঐতিহাসিক নির্বাচনে দীর্ঘদিনের গণতন্ত্র রক্ষক ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন। তিনি নতুন গণতান্ত্রিক সরকারের প্রধান হন। এতে অনেকেই আশা প্রকাশ করেন যে তিনি রোহিঙ্গাদের কষ্টের ইতি টানবেন।
গত সেপ্টেম্বর মাসে ওবামা প্রশাসন মায়ানমারের উপর থেকে অবশিষ্ট অর্থনৈতিক অবরোধ শিথিল করে। ও্ই সময় বলা হয়েছিল যে, মানবাধিকারে প্রতি সম্মান জানিয়েছে দেশটির মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন সরকার কাজ করবে। সেই দাবি এখন অকালপক্ক বলে মনে হচ্ছে। অং সান সু চি রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে উল্লেখ জোর দিয়ে বলেন যে, তারা বহিরাগত এবং যুক্তি দেন যে, হামলার ঘটনায় সরকারের প্রতিক্রিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে।
এদিকে, মানবিক সহায়তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীদের ওই এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। ইউনিসেফ সতর্ক করে দিয়েছেন যে, অনাহার এবং চিকিৎসার অভাবে হাজার হাজার শিশু অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব অসহায় ব্যক্তিদের কাছে সাহায্য পৌঁছানোর জন্য সরকারকে অবশ্যই অবিলম্বে মানবাধিকার কর্মীদের সেখানে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করতে হবে।
জাতিসংঘ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এসব সহিংসতার ঘটনার একটি নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সহায়তার জন্য জাতিসংঘকে আমন্ত্রণ জানাতে মায়ানমার সরকার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। একজন মানবাধিকার রক্ষক হিসাবে অং সান সু চি তার খ্যাতিকে বজায় রাখতে চাইলে তাকে অবশ্যই এখন ওই আমন্ত্রণ প্রসারিত করতে হবে।